Ads

৪৬তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতি যেভাবে

 

৪৬তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতি যেভাবে

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ও ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন। আজ চতুর্থ পর্বে বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রস্তুতির পরামর্শ ছাপা হলো—

বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে চার ঘণ্টায় ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। বিসিএস লিখিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে লেখার সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে এ পরীক্ষায়। অনেক বেশি লিখেও সব প্রশ্নের উত্তর করা ও মনে সন্তুষ্টি আসা আসলেই একটু কঠিন।

এ পরীক্ষায় ২০ নম্বর করে মোট ১০ সেট প্রশ্ন থাকে। ২০ নম্বরের প্রতি সেটে ১-৪ টি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে আগে ৫ নম্বর করে ৪টি প্রশ্ন দিয়ে প্রতিটি সেট সাজানো হলেও বর্তমানে ১০ ও ২০ নম্বরের প্রশ্ন বেশি থাকে। আমার মতে, ৫ নম্বরের অনেক ছোট ছোট প্রশ্ন থাকলে নম্বর ওঠানো সহজ হয়। কিন্তু বেশি নম্বরের বড় বড় প্রশ্নের উত্তর লিখে নম্বর ওঠানো একটু কঠিন।

আরও পড়ুন

২৪০ মিনিটের এ পরীক্ষায় আপনাকে ১০ মিনিট বিয়োগ করে ২৩০ মিনিটের কৌশল সাজাতে হবে। প্রথমে প্রশ্ন পাওয়া, পড়া ও মনে মনে উত্তর সাজিয়ে নেওয়া, অতিরিক্ত খাতা নেওয়া ও সেলাই করা ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজে ৮-১০ মিনিট চলে যাবে। বাকি ২৩০ মিনিট ২০০ নম্বরের জন্য বরাদ্দ করলে দেখবেন ৫, ১০ ও ২০ নম্বরের উত্তরের জন্য ৬, ১১.৫ ও ২৩ মিনিট সময় পাবেন সর্বোচ্চ। তাই বেশি বেশি লেখার মাধ্যমে সহিষ্ণুতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এবারের পরীক্ষা থেকে হয়তো উত্তরপত্রে ক্রম অনুযায়ী উত্তর লিখতে হতে পারে। তাই বাসায় ক্রম অনুযায়ী লেখার চর্চা করতে হবে।

এবার বিভিন্ন অধ্যায়ভিত্তিক গুরুত্ব বুঝে নেওয়া দরকার। কারণ, সব অধ্যায় আপনার সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ার দরকার নেই। বিগত ৩৫-৪৫তম লিখিত পরীক্ষায় অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন আসার হার দেখে নেওয়া যাক। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু থেকে প্রশ্ন এসেছিল ১৪টি, জনতত্ত্ব ও সংস্কৃতিতে ২০টি, আবহমান বাংলার ইতিহাসে ২টি, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৮টি, মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৬টি, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ৭টি, গণতন্ত্র ও রাজনীতি বিষয়ে ৮টি, নির্বাচন বিষয়ে ১৪টি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সম্পর্কে ১৯টি। এ ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান বিষয়ে ২০টি, সরকারের অঙ্গসংগঠন বিষয়ে ২২টি, অর্থনীতি (তত্ত্বীয়) বিষয়ে ২টি, খাতভিত্তিক অর্থনীতিতে ৪টি, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ে ৮টি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বিষয়ে ২৮টি, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিষয়ে ১৮টি, বাণিজ্য ও বিশ্বায়ন বিষয়ে ৫টি ও টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বিষয়ে ৩৩টি প্রশ্ন এসেছিল।

এ অধ্যায়গুলো দেখে আপনি কোনগুলো ভালোভাবে পড়বেন, তা ঠিক করে নিতে হবে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সংস্কৃতি ও নৃতত্ত্ব, গণতন্ত্র ও রাজনীতি, নির্বাচন, সংবিধান, পররাষ্ট্র সম্পর্ক, সরকারের অঙ্গসংগঠন, খাতভিত্তিক অর্থনীতি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ—এ অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়তে পারেন। তা ছাড়া এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ, অর্থনীতি ও গ্রামীণ অর্থনীতি—এ বিষয়গুলো সম্পর্কেও ভালো ধারণা নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

প্রস্তুতির জন্য করণীয়

প্রথমেই ৩৫তম বিসিএস থেকে সর্বশেষ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে। এখানে কিছু কিছু প্রশ্ন বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক, তা আপনি বুঝে বাদ দিতে পারবেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। দেশের বর্তমান ঘটনা, আন্তর্জাতিক, বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা থাকলে আপনার লেখার মান ভালো হবে। সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি জানার জন্য মাসিক ম্যাগাজিনগুলোতে চোখ রাখা ভালো ও কার্যকর।

বাংলাদেশ বিষয়াবলির খাতায় সংবিধান ও অর্থনৈতিক সমীক্ষার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা দরকার। সংবিধানের অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা এবং সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (শিক্ষা, প্রবাসী ও প্রবাস আয়, কৃষি, মৎস্য, বনজসম্পদ, জনসংখ্যার বিভিন্ন সূচক ইত্যাদি) আয়ত্তে রাখা দরকার। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সম্ভব হলে সংবিধানের রেফারেন্স (যেমন খাদ্য নিরাপত্তা বা শিক্ষাসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে ১৫ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা বা মাদক সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ১৮ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা) দেওয়া যেতে পারে। অনুচ্ছেদ হুবহু লিখতে পারলে খুবই ভালো, কিন্তু সম্পূর্ণ মনে না থাকলেও মূলভাব লিখলেও হবে। আর অর্থনৈতিক সমীক্ষা বা অন্য কোনো রিপোর্ট থেকে কোথাও তথ্য উল্লেখ করলে ব্রাকেটে উৎস (যেমন অ. স. ২০২৪ বা বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট-২০২৪) দেওয়া উচিত। উৎস ব্যতীত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা কম। তথ্য বা সংবিধানের অনুচ্ছেদ উল্লেখ করার সময় নীল কালি ব্যবহার করা উচিত। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ বাজার থেকে সংগ্রহ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, টেবিল বা গ্রাফ আগেই চিহ্নিত করে নিতে পারেন। এতে পরবর্তী সময়ে পড়তে সুবিধা হবে বা সময় বাঁচবে। আর বই না কিনলে সমীক্ষার মূল তথ্যগুলো ছবি আকারে পাওয়া যায় অনলাইনে। তা সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।

বেশি নম্বর পেতে উত্তরপত্রে চিত্রাঙ্কন খুবই কার্যকর। ৬ মিনিট উত্তর লেখার সময় পাওয়া গেলে তখন ২ মিনিটে প্রাসঙ্গিক চিত্র এঁকে বাকি সময় লিখলে নম্বর পাওয়ার হার বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চিত্র এঁকে স্থানভেদে ফসল, বনাঞ্চল, খনিজ সম্পদ, প্রাচীন জনপদ, নদীপথ ইত্যাদি চিহ্নিত করার কৌশল রপ্ত কর‍তে পারলে ভালো। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন এলে বাংলাদেশের ম্যাপ এঁকে তাতে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়, প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ চিহ্নিত করে বর্ণনা দিলে নিঃসন্দেহে ভালো নম্বর উঠবে। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের চিত্র আঁকাও প্রার্থীর জানা উচিত।

পড়ার সময় আলোচ্যসূচি ধরে ধরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক সংগঠন (যেমন জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন), এনজিও, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিডিএস) ইত্যাদির ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারেন। বিভিন্ন পলিসি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পাবেন।

বাংলাদেশ বিষয়াবলির খাতায় ভালো ভালো উক্তি ব্যবহার করলে নম্বর পাওয়া যায়। আর কিছু কিছু উক্তি যদি নির্ভুল ইংরেজিতে লেখা যায়, তাহলে আরও ভালো হয়। তাই ভৌগোলিক বিষয়, পরিবেশগত ইস্যু, অর্থনীতি বা নারীর ক্ষমতায়ন, ইত্যাদি বিষয়ে ইংরেজিতে কিছু উক্তি মুখস্থ করতে পারেন।

আরও পড়ুন

পরীক্ষার খাতায় প্যারা আকারে লেখার চেষ্টা করবেন। উত্তরের শিরোনাম বা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বা তথ্য বা উক্তিগুলো নীল কালি দিয়ে লেখার চেষ্টা করবেন। পার্থক্য চাইলে টেবিল আকারে তা উত্তর করা ভালো। টেবিল আঁকবেন পেনসিল বা নীল কালিতে। ভেতরের লেখাগুলো কালো কালিতেই লিখবেন।

উত্তরপত্রে একটি উত্তর লেখা শেষ হলে সমাপ্তিসূচক চিহ্ন দিয়ে একটু জায়গা খালি রেখে আরেকটি প্রশ্নের উত্তর শুরু করা উচিত। তা নাহলে উত্তরে মার্কিং বাদ পড়তে পারে। ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য সব প্রশ্নের উত্তর করা জরুরি। তাই ন্যূনতম ধারণা থাকলেও তা গুছিয়ে উত্তর করবেন। তবে একদম অপ্রাসঙ্গিক উত্তর করা বা একই কথা বারবার লেখা বা ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে লেখা থেকে বিরত থাকুন, এতে পরীক্ষক বিরক্ত হতে পারেন। সময় কম থাকলে মূল কথাগুলো পয়েন্ট আকারে সিরিয়ালি লিখে দিয়ে আসবেন।

হাতের লেখা সুন্দর হওয়া জরুরি না হলেও বোধগম্য হওয়া জরুরি। নয়তো নম্বরপ্রাপ্তির হার বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে। আপনি এ বিষয়ের পরীক্ষা বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো এক মাধ্যমে দিতে পারবেন। তবে কোনো উত্তর বাংলা আবার কোনো উত্তর ইংরেজি, এভাবে দিতে পারবেন না। মূল পরীক্ষায় অতিরিক্ত উত্তরপত্র নিলে তা ক্রম অনুযায়ী সেলাই করে আটকাবেন এবং মূল ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট করবেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!