Ads

গাজী টায়ার্সে আগুনে কমেছে টায়ারের সরবরাহ, বেড়েছে দাম

 

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে জ্বলছে গাজী টায়ার্সের কারখানা
দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে জ্বলছে গাজী টায়ার্সের কারখানাফাইল ছবি

গাজী টায়ার্সের কারখানায় সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনার পর কোম্পানিটির উৎপাদিত টায়ার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের বাজারে টায়ারের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে গত দেড় মাসে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের টায়ারের দাম ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উৎপাদকদের বক্তব্য হচ্ছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে রাবারসহ টায়ার তৈরির কিছু দেশি কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিদেশি কাঁচামাল আমদানির ব্যয়ও। এ ছাড়া গত জুনে ব্যাংকঋণের সুদের হার আরেক দফা বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে টায়ারের উৎপাদন ব্যয় ও দাম বেড়েছে।

এদিকে দেশি টায়ার উৎপাদক ও পাইকারি বিক্রেতাদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, গরম কমে আসছে। এ রকম সময়ে বাজারে টায়ারের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। ফলে গাজী টায়ারের সরবরাহে ঘাটতি হলেও দেশি অন্যান্য কোম্পানির তৈরি টায়ার দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে।

‘দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি’

গত ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় অবস্থিত গাজী টায়ার্সের কারখানায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন দেওয়ার আগে ও পরে কারখানাটিতে ব্যাপক হারে লুটপাট করা হয়। আগুনে কারখানাটির কাঁচামাল রাখার গুদাম পুরোপুরি পুড়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটিতে রিকশা, ভ্যান, সিএনজিসহ থ্রি-হুইলার, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ প্রায় সব ধরনের গাড়ির টায়ারই তৈরি হতো। গাজী টায়ার্সের অ্যাকাউন্টস ও ফিন্যান্স বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম জানান, অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনায় তাঁদের সব মিলিয়ে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে তাঁদের সব ধরনের টায়ার বিক্রি বন্ধ রয়েছে। নেপালে যে টায়ার রপ্তানি হতো, সেটিও এখন বন্ধ।

ফখরুল ইসলাম আরও জানান, সব ধরনের যান মিলিয়ে তাঁদের কারখানায় বছরে ৪০ লাখের মতো টায়ার উৎপাদিত হতো। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে সব ধরনের টায়ার উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ নতুন করে উৎপাদন সম্ভব হবে, সে বিষয়ে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেননি।

সরবরাহ কমেছে

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে যানবাহনে ব্যবহৃত টায়ারের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সরবরাহ করত গাজী টায়ার্স কোম্পানি। বিশেষ করে রিকশা ও ভ্যানের মতো হালকা যানের টায়ার বিক্রিতে গাজী টায়ারের হিস্যা ছিল ৩০–৪০ শতাংশ। এ ছাড়া বাস-ট্রাকসহ ভারী যানবাহনের টায়ারও অল্প পরিমাণে বিক্রি করত তারা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাজী টায়ারের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে বাজারে প্রভাব পড়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীর বংশাল, বাংলাবাজার, মিরপুর ১০ ও বাংলামোটর এলাকায় টায়ার বিক্রির বেশ কিছু দোকানে সরেজমিনে খোঁজ নেন এই প্রতিবেদক। এর মধ্যে কোনো দোকানেই গাজী টায়ার দেখা যায়নি।

বাংলাবাজারের নিউ শাহীন মোটরসে তিন সপ্তাহ ধরে গাজী টায়ারের নতুন কোনো চালান আসেনি। যা মজুত ছিল, তা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। একই ধরনের তথ্য জানা গেল বংশালের ফজলু রিকশা এন্টারপ্রাইজে গিয়েও। এ দোকানের স্বত্বাধিকারী বজলুর রহমান বলেন, বর্তমানে দোকানে গাজী ব্র্যান্ডের কোনো টায়ার নেই। তবে অন্য কোম্পানির টায়ার বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরবরাহ কিছুটা কম থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। তবে এভাবে বেশি দিন চললে এবং অন্য কোম্পানিগুলো উৎপাদন না বাড়ালে ভবিষ্যতে টায়ারের কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।

বেড়েছে দাম

এদিকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে জানা গেছে, গত দেড় মাসে বাজারে সব ধরনের টায়ারের দাম বেড়েছে। গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে বাজারে টায়ারের সরবরাহ কিছুটা কমে যায়। এর পর থেকে কোম্পানিগুলো একাধিক দফায় টায়ারের দাম বাড়ায়। সর্বশেষ গাজী টায়ারের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দেশি উৎপাদক কোম্পানিগুলো সুযোগ বুঝে টায়ারের দাম বাড়িয়ে চলছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, রিকশা-ভ্যানের প্রতিটি টায়ারের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আবার বাস-ট্রাকের মতো ভারী গাড়ির প্রতিটি টায়ারের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। ঢাকার বংশালের টায়ার বিক্রির দোকান শহীদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শহীদ আক্তার বলেন, গত দেড় মাসে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের টায়ারের দামই ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে—এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন দেশি টায়ার উৎপাদক কোম্পানি মেঘনা ইনোভা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) লুৎফর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংগত কিছু কারণেই টায়ারের দাম বেড়েছে। লুৎফর রহমান জানান, কয়েক মাস ধরে টায়ার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল রাবারের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে ডলারের দাম ও ব্যাংকঋণের সুদহার। এসব কারণে টায়ার উৎপাদনের খরচ বেড়েছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!