Ads

সংকট সমাধানে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে

 

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলে আসা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে যে সহিংসতার সূচনা ঘটেছে, তা চরম দুর্ভাগ্যজনক। গতকাল সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ ও সরকার–সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং পুলিশের হামলায় এরই মধ্যে ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি চাকরির কোটাসংক্রান্ত বিষয়টির মীমাংসা কি সত্যিই এত জটিল? শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে এভাবে মোকাবিলা করা ছাড়া কি সরকারের সামনে আর কোনো পথ ছিল না?

আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা এবং এতগুলো প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার নির্বাহী আদেশে পরিপত্র জারি করে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করে দিয়েছিল। যদিও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার। পরে ২০২১ সালে করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারি পরিপত্র বাতিল করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে এবং আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য আদেশ স্থগিত ঘোষণা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে নির্বাহী বিভাগের উদ্যোগ ও চূড়ান্ত ফয়সালার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

কোটা বাতিল নিয়ে মামলা হওয়ায় বিষয়টি এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন নির্বাহী উদ্যোগের মাধ্যমে শুরুতেই এই সমস্যার নিষ্পত্তি সম্ভব ছিল। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী কোটা রাখা বা না রাখা এবং রাখলে কত ভাগ ও কোন কোন ক্ষেত্রে তা রাখা হবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারি চাকরির বর্তমান কোটাপদ্ধতির যে সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়ে বলা যায় সমাজের প্রায় সব মহলই একমত। এমনকি সরকারের মধ্যেও কোটা সংস্কারের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জানা যায়। তাহলে এই সমস্যাকে কেন জিইয়ে রাখা হয়েছে এবং হচ্ছে?

এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা বা সরকারের তরফে ইতিবাচক আশ্বাস বা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল বলে আমরা মনে করি।

কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়তো আগের মতোই শান্তিপূর্ণ থাকত, যদি না ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিত। শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং বিক্ষোভ দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে।

২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময়ও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রলীগকে মাঠে নামানো হয়েছিল, ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে। এবারও তার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। মঙ্গলবার সারা দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ভয়াবহ। রোববারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করলে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে প্রস্তুত থাকতে বললেন। এর মধ্য দিয়ে কেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হলো, সেই প্রশ্ন না উঠে পারে না। সরকার অবশ্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ এনেছে।

আমরা মনে করি, কোটা সমস্যাটিকে শুধু আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়ে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সরকার চাইলে কোটা বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে। সরকারের উচিত হবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসা। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে।

আমরা সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!